বিদ্যুৎতের দাম বাড়ানোর পর কেনো বিদ্যুৎ থাকবে না প্রশ্ন ১৮ কোটি জনগণের?

 অনলাইন ডেস্কঃ

Time:01:53pm


২০ জ্যৈষ্ঠ,১৪৩০ বঙ্গাব্দ,গ্রীষ্মকাল,- শনিবার, ০৩ জুন-২০২৩ খ্রিস্টাব্দ,১৩ জ্বিলকদ, ১৪৪৪ হিজরি।


বিদ্যুৎ বিলের নামে সরকার যে প্রতি মাসে কয়েক শ কোটি টাকা ডিমান্ড চার্জ, মিটার ভাড়া এবং ভ্যাট আদায় করছে তা ভর্তুকির চেয়ে অনেক বেশি। কোনো বিদ্যুৎ খরচ না করলেও ১০০ টাকা বিদ্যুতের মূল্য, ৫০ টাকা ডিমান্ড চার্জ এবং ২০ টাকা মিটার ভাড়া দিতেই হবে। প্রিপেইড মিটারে ভাড়া ৪০ টাকা, মেইন মিটার ২৫০ টাকা।


একজন ক্ষুদ্র গ্রাহক যিনি ৫০ ইউনিট বা তার কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন তাঁকেও কমপক্ষে ৭০ অথবা ৯০ টাকা দিতেই হবে যা কি না একজন বড় ভোক্তার জন্যও পরিমাণে এক। এটা হাস্যকর এবং দুঃখজনক। 


মিটার ভাড়া না হয় বোঝা গেল। কিন্তু ডিমান্ড চার্জ কী? কিসের ডিমান্ড এবং তা ধনী গরিব সবার জন্য সমান কেন? যে ভোক্তা ১০০০ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ করেন আর যে দরিদ্র লোকটি ১০ ইউনিট ব্যবহার করেন তাঁরা দুজনেই ৫০ টাকা দেবেন কোন যুক্তিতে? সঠিক বিল আদায় এবং অপচয় রোধ করার জন্য নিজেদের স্বার্থে পিডিবি, ডিপিডিসি, ডেসকো, আরইবি মিটার স্হাপন করেছে আর তার ভাড়া আদায় করছে গ্রাহকদের কাছ থেকে। কী অদ্ভুত! 


তাই এসব অযৌক্তিক চার্জ পরিহার করে ইউনিটপ্রতি মূল্য বাড়িয়ে সরকার বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমাতে পারে। তাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ভোক্তাদের বিদ্যুৎ বিল বাড়লেও আগের তুলনায় মোট বিল কমবে বৈ বাড়বে না। 


বর্তমানে সর্বনিম্ন চার্জ ইউনিটপ্রতি ৩ টাকা ৫৭ পয়সার স্হলে ৪ টাকা ৫০ পয়সা অর্থাত্ ৯৩ পয়সা বাড়ানো হলেও মোট বিল, ডিমান্ড চার্জ ও মিটার ভাড়া ছাড়া ২২৫ টাকা, যা আগের ২৪৮ টাকা ৫০ পয়সার চেয়ে ২৩ টাকা ৫০ পয়সা কম। কিন্তু বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি ৪৬ টাকা ৫০ পয়সা। এভাবে ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারীর মূল্য ৪ টাকা ১৯ পয়সা থেকে ৫ টাকা করা হলে গ্রাহকের সাশ্রয় ৯ টাকা ২৫ পয়সা। বিদ্যুৎ বাবদ আয় বৃদ্ধি ৬০ টাকা ৭৫ পয়সা।


এক বিবরণে প্রকাশ—২০১৭ সালের শেষে পল্লীবিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৯৮ লাখের কিছু বেশি, যা বর্তমানে ৩ কোটির ওপরে। অন্যান্যদের গ্রাহকসংখ্যা কম-বেশি ৩ কোটি, যাদের সবাই আবাসিক সংযোগ গ্রহণকারী।


 এই ৬ কোটি আবাসিক গ্রাহকের ৪ ভাগের ৩ ভাগই নিম্ন এবং নিম্ন-মধ্যবিত্ত। অর্থাত্ সাড়ে চার কোটি গ্রাহকের কাছ থেকে আগে উল্লেখ করা হিসাবে মাসে ২১০ কোটি এবং বছরে আড়াই হাজার কোটি টাকার বাড়তি বিদ্যুৎ বিল আদায় হবে। শুধু তাই নয়, এই বাড়তি বিলের ওপর ৫ শতাংশ হিসাবে ১২৫ কোটি টাকা বাড়তি ভ্যাট আদায় হবে—যা সরাসরি সরকারের রাজস্ব খাতে হবে যুক্ত।


অতএব, প্রস্তাব—বিদ্যুৎ বিলে ডিমান্ড চার্জ ও মিটার ভাড়া উঠিয়ে দিয়ে বর্তমান বিভাজন অনুযায়ী ৫০ ইউনিট পর্যন্ত প্রতি ইউনিট ৪ টাকা ৫০ পয়সা, ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত ৫ টাকা, ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট পর্যন্ত ৫ টাকা ৫০ পয়সা, পরবর্তী ১০০ ইউনিট ৬ টাকা, তার পরবর্তী ১০০ ইউনিট ৬ টাকা ৫০ পয়সা, পরবর্তী ২০০ ইউনিট ৭ টাকা এবং তদুর্ধ্ব ইউনিট প্রতি ৭ টাকা ৫০ পয়সা করা হোক। এই প্রসঙ্গে বিদ্যুতের সিস্টেম লসের কথা এসে যায়।


 এটা ২০০৪-০৫ সালে মোট উত্পাদনের ২০ শতাংশ ছিল। সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায় ২০২০-২১ সালে পিডিবির সিস্টেম লস ৮.৫, আরইবির ৯.৭ এবং ডেসকোর ৫.৬ শতাংশ। এ অবস্হায়, বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি নয় বরং হ্রাস করা সম্ভব এবং তা করা উচিত। আর এটা আরো কমিয়ে আনতে পারলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্লোগান দেওয়াও অর্থবহ হয়। ঢাকা

Post a Comment

0 Comments