ম্যাপল গাছের প্রায়১০০+
জাত রয়েছে। এসবের মাঝে ম্যাপল সিরাপ তৈরিতে সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত হলো শুগার ম্যাপল (Acer saccharum) ও এর একদম কাছাকাছি আরেকটা জাত ব্লাক ম্যাপল (Acer nigrum)। এছাড়াও রেড ম্যাপল (Acer rubrum), সিলভার ম্যাপল (Acer saccharinum) গাছকেও কাজে লাগানো হয়।
তবে কমবেশি সব জাতই কাজে লাগে, উপরোক্ত জাতগুলো একটু বেশিই কাজের আরকি সিরাপের মান কিংবা পরিমাণ বিবেচনাতে।
গাছগুলো গ্রীষ্মকালে তৈরিকৃত অতিরিক্ত খাদ্য স্টার্চ হিসেবে জমা করতে থাকে শীতের সঞ্চয় হিসেবে। তারপর শীতের শেষে বসন্তের শুরুতে ওসব স্টার্চ আবার চিনিতে রূপান্তরিত হয়। আবার শীতের শেষের দিকে তাপমাত্রা হিমাংকের উপরে চলে যাবার জন্য গাছগুলোর ভেতর ও বাইরের চাপের পার্থক্য তৈরি, ফলস্বরূপ গাছের মধ্যে একধরনের প্রাণরসের প্রবাহ তৈরি হয়। রসের সাথে তৈরিকৃত চিনি মিশে যায় এবং গাছে কোন ফাঁকফোকর ফেলেই বাইরে বের হয়ে আসে।
ম্যাপল গাছ থেকে বের হওয়া রসে ২-২.৫% চিনি থাকে, অনেক সময় ৩.৫% এর মতোও থাকতে পারে। এখান থেকে অবশ্য দানাদার চিনি আলাদা করা হয় না, কিছুটা তরল সমেত থেকে যায় যা ম্যাপল সিরাপ নামে পরিচিত। মোটামুটি ৪৩ গ্যালন রস থেকে ১ গ্যালন সিরাপ পাওয়া যায়।
রস থেকে সিরাপ প্রস্তুতিঃ
১) প্রথম কাজ রস সংগ্রহ করা। গাছের কাণ্ডের কোথাও ছিদ্র করে পাইপের মতো লাগিয়েই রস সংগ্রহ করা যায়।
বড় পরিসরে কাজের ক্ষেত্রে একটা একটা গাছে পাত্র ঝুলিয়ে সংগ্রহ করাটা সুবিধাজনক নয়, টিউবিং সিস্টেম বেশ কাজের। প্রতিটা গাছে ছিদ্র করে সংগ্রাহী নল বসিয়ে সবগুলোকে একটা কমন টিউবের সাথে আটকে এক দিক থেকে সংগ্রহ করা হয়।
২) এরপর সংগৃহীত রসকে থেকে সেলসিয়াস তাপমাত্রায় জ্বালাতে হবে।
কতক্ষণ জ্বালাবেন?
মিশ্রণের তাপমাত্রা সেলসিয়াসের কাছাকাছি চলে আসলেই জ্বালানো বন্ধ করা যাবে, যদিও এতো মাপামাপি ঝামেলার। দেখতে একটু গাঢ়, খেতে মজার মনে হলেই জ্বালানো বন্ধ করা যায়।
যদিও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে সিরাপ হাইড্রোমিটার দিয়ে সুক্রোজের মাত্রা মাপে দেখা হয়, ( দ্বারা বোঝায় ১০০ গ্রাম মিশ্রণে ১ গ্রাম সুক্রোজ বিদ্যমান) হলেই কাজ শেষ।
৩) এবার প্রস্তুতকৃত সিরাপকে ফিল্টার করে নিতে হবে।
৪) আর সবশেষে বোতলে পুরে ফেললেই হয়ে গেল।
প্রস্তুতকরণের শুরু থেকে শেষঃ
ম্যাপল সিরাপের আবার গ্রেডিং সিস্টেম রয়েছে।
পুরাতন সিস্টেমে A, B, C গ্রেডিং থাকলেও এখন তা বাতিল। শুধুই A গ্রেড রয়েছে যা রঙের তারতম্য বিবেচনায় চার ভাগে বিভক্ত। ভালো খারাপের ভিত্তিতে অবশ্য নয়, রং যত গাঢ় হতে থাকবে স্বাদও ততো গাঢ় হবে, ব্যবহারেরও পার্থক্য দেখা যায়।
চিনি নাকি ম্যাপল সিরাপ? কোনটি স্বাস্থ্যকর?
বাদামী চিনি আর সাদা চিনির মধ্যে পার্থক্য নেই বললেই চলে।
এখন বাদামী চিনি আর ম্যাপল সিরাপের বিষয়টা দেখা যাক।
- ১০০ গ্রাম ম্যাপল সিরাপে চিনি পাওয়া যাবে ৬৮ গ্রামের মতো, অন্যদিকে বাদামী চিনিতে রয়েছে ৯৭ গ্রাম।
- প্রতি ১০০ গ্রাম বিবেচনায়, গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ম্যাপল সিরাপের ৩৯, বাদামী চিনির ৬৮।
- ম্যাপল সিরাপে প্রায় ২৪ ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায় (পরিমাণে যথেষ্ট সামান্য)।
- নিচের ছক থেকে বিভিন্ন খনিজ উপাদানের উপস্থিতির পার্থক্য বুঝতে পারবেন।
আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, জিংক, কপার, ম্যাংগানিজের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি পাওয়া যায় ম্যাপল সিরাপে, অন্যদিকে ক্যালসিয়াম, সোডিয়ামের মাত্রা কম।
এখন সিদ্ধান্তে আসা প্রয়োজন কোনটি খাবো?
ইন্টারনেট ঘাটাঘাটি করতে গেলে মোটামুটি সব জায়গাতেই পাওয়া যাবে ম্যাপল সিরাপ অনেক স্বাস্থ্যকর। কিন্তু উপরোক্ত তথ্য বিশ্লেষণ করলে অনেক বেশি ভালো অবশ্য বলা যায় না, তবে আমাদের ব্যবহৃত সাধারণ চিনির তুলনায় কিছুটা ভালো।
ম্যাপল সিরাপের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়াতে আমাদের রক্তে সুগারের পরিমাণ ধীর গতিতে বাড়াবে।
বেশ কিছু খনিজ উপাদান থাকলেও তা যথেষ্ট কম। সুতরাং খনিজ উপাদানের জন্য ম্যাপল সিরাপ খাবো- এরকমটা ভাবার কোন কারন নেই। ছকে দেখে অনেক বেশি মনে হলেও তা কিন্তু ১০০ গ্রামের জন্য। আপনি নিশ্চয় ১/২ চামচ খাবেন। সেক্ষেত্রে আপানার দৈনিক চাহিদার এক শতাংশ পাবেন বলে মনে হয় না।
১০০ গ্রাম বিবেচনায় চিনির পরিমাণ কম দেখে আনন্দিত হবার কিছু নেই। কারণ ১০০ গ্রাম ম্যাপল সিরাপে ৩২ গ্রামের মতো পানি থাকে, যেখানে বাদামী চিনিতে ১ গ্রামের কাছাকাছি। পানি উড়িয়ে দিয়ে বাদামী চিনির সাথে তুলনা করতে গেলে বিপদে পড়া লাগবে কিন্তু।
চায়ে এক চুমুক দিয়ে চিল্লিয়ে উঠলেন, 'কই গো, কি চা বানাইলে? ঘাটের পানির মতো ক্যান? আরও দুই চামচ সিরাপ ঢেলে দিয়ে যাও তো!' এরকম করলে বলবো আপনি সিরাপ না খেয়ে বাজার থেকে চিনি কিনে খান সেটাই ভালো, শুধু শুধু টাকাগুলো জলে যাবে। আর এরকমটা না করে থাকলে ঠিক আছে, চালিয়ে যান ম্যাপল সিরাপ।
সূত্রঃ
0 Comments
আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ।