গর্ভবতী মায়ের জন্য কোন খাবারগুলো উপকারী এবং কোন খাবারগুলো ক্ষতিকর?

গর্ভবতী মহিলাদের রোজের খাবার তালিকায় ডাল, সোয়াবিন, বাদাম জাতীয় খাদ্যদ্রব্যও থাকা প্রয়োজন। এই জাতীয় খাদ্যদ্রব্যে ফাইবার, প্রোটিন, আয়রন, ফোলেট ও ক্যালসিয়াম থাকে। এই সমস্ত কিছুই শিশুর বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয়।চলো এবার জেনে নেওয়া যাক গর্ভবতী মায়ের জন্য কোন খাবারগুলো উপকারী এবং কোন খাবারগুলো ক্ষতিকর-

উপকারি খাবারঃ-

মিষ্টি আলুঃ-মিষ্টি আলু বা রাঙা আলু শুধু খেতেই যে সুস্বাদু তা নয়, এতে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন থাকে। এটি উদ্ভিদে পাওয়া এক ধরণের যৌগ যা মানব শরীরে ভিটামিন এ-তে পরিণত হয়। রাঙা আলুতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবারও পাওয়া যায়।

স্যামন মাছঃ-স্যামন মাছও হবু মায়েদের স্বাস্থ্যের পক্ষে খুব উপকারী। এই মাছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা বাচ্চার মস্তিষ্ক ও চোখের পুষ্টি জোগায়।

ডিমঃ-খাদ্যতালিকায় ডিম থাকা মাস্ট। ডিমে প্রায় প্রয়োজনীয় সব রকমেরই পুষ্টি মজুত থাকে। একটা বড় ডিমে ৮০ ক্যালরি, প্রচুর প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ থাকে।

সবুজ শাকসব্জিঃ-সবুজ শাকসব্জি তো অবশ্যই যে কোনও পুষ্টিকর খাদ্যতালিকার অন্যতম প্রধান উপাদান। এতে ফাইবার, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম থাকে।

চর্বিহীন মাংসঃ-চর্বিহীন মাংস শরীরে উচ্চমানের প্রোটিন জোগায়। নানা ধরনের রেড মিটে আয়রনের পরিমাণ বেশি থাকে যা রক্ত গাঢ় করতে সাহায্য করে।

শুকনো ফলঃ-শুকিয়ে নেওয়া ফলে সাধারণত প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি, ফাইবার, বিভিন্ন রকমের ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ থাকে। এক টুকরো ড্রাই ফ্রুটে একটা তাজা ফলের সমান পুষ্টি থাকে। ফলটা শুধু জল ছা়ড়া হয়।

মাছের যকৃৎঃ-মাছের যকৃৎ থেকে প্রাপ্ত তেলও শরীরের পক্ষে খুব ভাল। এতে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড EPA ও DHA থাকে। এগুলিও মস্তিষ্ক ও চোখের পুষ্টির জন্য প্রয়োজনীয়।

জলঃ-সর্বোপরি যা প্রয়োজন তা হল বিপুল পরিমাণে জল খাওয়া। শরীরকে যথাসম্ভব হাইড্রেটেড রাখা একান্ত প্রয়োজনীয়। গর্ভাবস্থায় রক্তের পরিমাণ ৪৫ শতাংশ বেড়ে যায়। তাই শরীরে পর্যাপ্ত জল থাকা খুব দরকার।

ক্ষতিকর খাবারঃ-

হাই মার্কারি ফিশঃ- মাছকে টাটকা রাখতে পারদ দেওয়া থাকে অনেক সময়ে। পারদ শরীরে পক্ষে বিষের মতোই সাংঘাতিক। তাই গর্ভাবস্থায় এটি পেটে গেলে শিশুর উপরে তার প্রভাব পড়বে। সাধারণত টুনা, শার্ক, কিং ম্যাকারেল, সোর্ডফিশে পারদ থাকে। এই সময়ে সুশিও খেতে না করছেন চিকিৎসকরা।

ক্যাফিনঃ- ক্যাফিন জাতীয় খাবার অর্থাৎ কফি, এনার্জি ড্রিঙ্ক, কোল্ড ড্রিঙ্ক এই ধরনের খাবার থেকে গর্ভবতী মহিলাদের দূরে থাকতে বলছেন চিকিৎসকরা। এতে শিশুর জন্মের সময়ে ওজনে সমস্যা হতে পারে।

প্রসেসড জাঙ্ক ফুডঃ- রিফাইন্ড ফ্লাওয়ার বা ময়দা দিয়ে তৈরি প্রসেসড ফুড খাবেন না গর্ভবতী অবস্থায়। যে খাবারে অতিরিক্ত কৃত্রিম ভিটামিন দেওয়া থাকে বা ভাজা অবস্থায় স্টোরড থাকে সেগুলি এড়িয়ে চলুন।

প্যাকেজড ফ্রুটস ও স্যালাডঃ- শুধু ফাস্ট ফুডই নয়। প্যাকেজড ফলও খেতে না করছেন চিকিৎসকরা। কারণ এই ফলগুলিকে টাটকা রাখার জন্য এমন কিছু রাসায়নিক ব্যুবহার করা হয় যা মোটেই স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো নয়। এর প্রভাব সরাসরি শিশুর শরীরে উপরে পড়তে পারে।

অর্ধক সিদ্ধ ডিমঃ- ডিম খেলে অবশ্যই ভালো করে রান্না করে এই সময়ে খান। হাফ বয়েলড ডিম খাবেন না। এতে গর্ভবতীর মায়ের স্বাস্থ্যের উপরে প্রভাব পড়ে। পেটে ব্যথা, বমি ভাব, জ্বর ইত্যাদি হতে পারে। এছাড়া আইসক্রিম, কেক, মেওনিজ ইত্যাদিতে কাঁচা ডিম ব্যবহার করা হয়। এই সময়ে এইগুলি খাবেন না।

অ্যালকোহলঃ- অ্যালকোহল গর্ভবতী মহিলাদের জন্য একেবারে ক্ষতিকর। গর্ভাবস্থায় মদ্যপান খেলে শিশু মিসক্যারেজ পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। শিশুর মস্তিষ্কের উপরে প্রভাব ফেলে। 

তথ্য সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো

Post a Comment

0 Comments