প্রস্টেট গ্রন্থি পুরুষদের একচেটিয়া বলে এই সমস্যা থেকে মহিলারা মুক্ত
'মূত্রত্যাগের অক্ষমতা' বা 'রিটেনশন অফ ইউরিন' কথাটির অর্থ মূত্রথলি বা ব্লাডার খালি করতে না পারা। এটি তীব্র অথবা ক্রনিক হতে পারে। সমস্যাটি তীব্র হলে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে শৌচাগারে গিয়ে দেখা যায়, বহুক্ষণ চাপ দেওয়া সত্ত্বেও একবিন্দু মূত্রও বেরিয়ে আসছে না। অন্যদিকে ক্রনিক রিটেনশন অফ ইউরিন সমস্যায় যাঁরা ভুগছেন তাঁরা কিছুটা মূত্রত্যাগ করতে পারেন ঠিকই, তবে ব্লাডার পুরোপুরি খালি করতে পারেন না। আমাদের মঞ্চের সদস্যদের জন্য এই সমস্যা নিয়ে বিশদে আলোচনা করা হল। পরামর্শ দিয়েছেন কলকাতা অ্যাপেলো গ্লেনঈগলস হাসপাতালের বিশিষ্ট ইউরোলজিস্ট ডাঃ অমিত ঘোষ। আজ প্রথম পর্ব।
বিব্রতকর পরিস্থিতিঃ-
একজন মানুষের ক্ষেত্রে তীব্র মূত্রত্যাগের অক্ষমতা সম্ভবত সবচেয়ে বিব্রতকর অবস্থা। মূত্রত্যাগের অক্ষমতায় মানুষ একবিন্দুও প্রস্রাব করতে পারেনা। অথচ ততক্ষণে তলপেট ফুলে গিয়ে অস্বস্তি হতে শুরু করেছে এবং দারুণ ব্যথা হচ্ছে। নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছেন পরিস্থিতিটা কতটা যন্ত্রণাদায়ক। এরকম সমস্যায় তাত্ক্ষণিক সুরাহা না হলে সমূহ বিপদ। রাতবিরেতে হলেও আরোগ্যের জন্য সত্ত্বর ব্যবস্থা নেওয়াটা জরুরি। তা ছাড়া ক্রনিক সমস্যাও মানুষকে বিব্রত করে। এতে ব্লাডার পুরোপুরি খালি হয় না বলে প্রস্রাব সম্পূর্ণ করার অনুভুতি হয় না। এছাড়াও,
- বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরে সরুধারায় মূত্র বেরয়
- ক্রমশ প্রস্রাবের নির্গমন বেগ দুর্বল হয়ে পড়তে থাকে
- মূত্র প্রবাহে সামঞ্জস্য থাকে না- বন্ধ হয়, আবার শুরু হয়
- ঘন ঘন ও জরুরি ভিত্তিতে টয়লেটে যেতে হয়
- অবস্থা আরও খারাপ হলে প্রস্রাব শুরু করতে দেরী হয়
- একেবারে শেষে ফোটায় ফোটায় প্রস্রাব হয়
কেন হয়ঃ-
মূলত মূত্রনালিতে বাঁধার সৃষ্টি হলে মূত্রত্যাগে অক্ষমতা দেখা দিতে পারে। যেমন, প্রস্টেট গ্রন্থির স্ফীত হয়ে এই বাঁধার কাজটি করতে পারে। এছাড়া ব্লাডারে স্টোন থাকলে তা যেমন মূত্রনালির পথ আটকে দাঁড়াতে পারে, তেমনি সংক্রমণের কারণে মূত্রনালি ফুলে গিয়ে কিংবা প্রদাহের শিকার হয়ে অনেক সময় বাধার সৃষ্টি করে। মস্তিস্ক ও ব্লাডারের মধ্যেকার যে স্নায়বিক সঙ্কেত বা নার্ভাস সিগনাল চালু আছে তার সংহতি নষ্ট হলেও মূত্রত্যাগে অক্ষমতা হয়। এমন কি কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতেও এমন হতে পারে।
কাদের হয়ঃ-
৫০ উর্ধ্ব পুরুষদের মধ্যে মূলত প্রস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধির কারণে মূত্রত্যাগের অক্ষমতা দেখা দেয়। প্রস্টেট গ্রন্থি যেহেতু পুরুষদের একচেটিয়া তাই এই ধরনের সমস্যা থেকে মহিলারা মুক্ত। তার মানে মহিলাদের মূত্রত্যাগে অক্ষমতা হয় না এমন কিন্তু নয়, তাঁদের ক্ষেত্রে অন্য কারণে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কী করা হয়ঃ-
প্রস্টেট গ্ল্যান্ড বেড়ে গিয়ে মূত্রনালি আটকে দিলে ক্যাথেটার নামের একটি সহজ চিকিত্সা সরঞ্জামের সাহায্যে সমস্যাটির সাময়িক সুরাহা করে রোগীকে আরাম দেওয়া যেতে পারে। ক্যাথেটার লাগিয়ে নিলে মূত্র অবাধে নির্গত হবে, আক্রান্ত মানুষটিও অস্বস্তিমুক্ত হবেন।
প্রস্টেট ছাড়া অন্য কোনও সাধারণ সমস্যায় মূত্রত্যাগে অক্ষমতা দেখা দিলে দু-একদিনের মধ্যেই কিন্তু ক্যাথেটার খুলে নেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে অধিকাংশ মানুষই আবার স্বাভাবিকভাবে মূত্রত্যাগ করতে পারেন।
তথ্য সূত্রঃ-দৈনিক ইনকিলাব
0 Comments
আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ।