ব্যতিক্রমধর্মী আর আকর্ষণীয় ঘ্রাণের জন্য সাতকরা সিলেট অঞ্চলে রসনার অন্যতম অনুষঙ্গ। সাতকরায় আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস।
যা মানব দেহের জন্য দারুণ উপকারী।এ ছাড়াও সাতকরার বেশ কিছু রাসায়নিক গুণাগুণ বিদ্যমান। এর সুঘ্রাণের জন্য পারফিউম সম্ভাবনা প্রচুর। আচার হিসেবেও সাতকরার কদর অতুলনীয়।
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সাতকরা নিয়ে গবেষণা শেষে এর স্বাদ ও গুণাবলী সম্পর্কে এমন তথ্য দিয়েছেন এমসি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞানের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. নেছাওয়ার মিয়া। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সাতকারার ওপর তিন বছরের গবেষণা শেষে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
তার গবেষণায় তিনি দেখেছেন সাতকরার নানা গুণাগুণ ও সম্ভাবনা। সাতকরার গুণাগুণ প্রসঙ্গে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সাতকরা ভিটামিন সি ছাড়াও বহু রাসায়নিক গুণাগুনে সমৃদ্ধ। যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
এ সময়ের মারাত্মক রোগ যেমন ক্যান্সার, কলন ক্যান্সার এসব প্রতিরোধে সাতকরা সহায়ক। বাত, শিরা-উপশিরা ব্যথায় সাতকরা উপকারি। সাতকরার খোঁসার মধ্যে এন্টি অক্সিডেন্ট প্রচুর পরিমাণে (শরীরের ক্ষতিকারক উপাদান ধ্বংস করে) আছে। এ ছাড়া সাতকরায় খাদ্যতন্ত্রু বা আঁশজাতীয় গুণাবলী বিদ্যমান।
সাতকরা নিয়ে গবেষণা একেবারে হয়নি। এর গবেষণা কার্যক্রম বাড়ালে অনেক উদ্ভাবনী বের করা যাবে। বিশেষ করে সাতকরার সুঘ্রাণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা থেকে অসাধারণ সুগন্ধী তেল তৈরি করা যায়। এ জন্য প্রয়োজন গবেষণা। আর এর প্রত্যেকটি গবেষণা কর্মই সফল হবে বলে তিনি মনে করছেন।
একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, একটি ডিপ ফ্রিজে সবুজ একটি সাতকরা একসপ্তাহ রেখে তারপর খোলা হলে পুরো কক্ষ সুগন্ধিতে ভরে যাবে। এটা যে কেউ বাসা বাড়িতে প্রয়োগ করে দেখতে পারেন। এর পারিফিউম গুণাবলী চমৎকার জানিয়ে এ অধ্যাপক বলেন, এটি খুবই প্রাকৃতিক। অন্য পারফিউমের মতো কৃত্রিম নয়।
তিনি জানান, সাতকরায় এসেনশিয়াল ওয়েল বা সুগন্ধি তেল থাকে খোসার ওপর। যা সাতকরা হাত নিয়ে দেখা যায়। তবে সাতকরায় অন্য সব সাইট্রাস ফলের মতো ভেতরের রসালো অংশ খাওয়া যায় না। কারণে এতে প্রচুর পরিমাণে এসিডিক ও তেতো স্বাদ থাকে।
সিলেট অঞ্চলে রান্নাঘরে সাতকরার ব্যাপক কদর আছে। এ অঞ্চলের গৃহিনীরা মাছ ও মাংসের তরকারি রান্নায় সাতকরা দেন। পরিমাণ মতো সাতকরা দিলে তরকারি স্বাদ কয়েক গুণ বেড়ে যায়। তবে পরিমাণ অতিরিক্ত হলে উল্টো ফল হতে পারে। মাংসের সঙ্গে রান্না করলে একটি আকর্ষণীয় ঘ্রাণযুক্ত খাদ্য তৈরি হয়।
এখন সিলেট নগরীর বেশিরভাগ রেস্টুরেন্ট আর রেস্তোরায় তরকারির মধ্যে সাতকরা দেওয়া হয়। স্থানীয় অনেকেই সাতকরা দিয়ে নানা রকম আচার তৈরি করছেন। যা সাতকরার স্বাদ বাড়িয়ে তুলেছে।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্যে চাকরি ও ব্যবসার জন্য বসবাসরত সিলেটিরা কাঁচা অথবা রোদে শুকিয়ে সঙ্গে করে ‘সাতকরা’ নিয়ে যান।
সাতকরার আশ কেটে শুকিয়ে ৬/৭ মাস অবধি অনায়াসেই সংরক্ষণ করা যায়। তবে মাঝেমধ্যে রোদে শুকিয়ে নিলে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রোধে শুকিয়ে রাখার পদ্ধতি
সাতকরা লম্বালম্বিভাবে একটি পুরু রেখে (একটি সাতকরা ১২/১৪ টুকরা) কেটে বেশ কদিন রোদে শুকিয়ে পলিথিনে মোড়ে একটি পাত্রে রেখে দিন। যখন খাওয়া প্রয়োজন রান্নার ১ ঘণ্টা আগে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। একদম স্বাভাবিক সাতকরার স্বাদ ও গন্ধ পাওয়া যাবে। আর তা রান্না করতে পারবেন কাঁচা সাতকরার নিয়মেই।
ভাপ দিয়ে ফ্রিজে সংরক্ষণ
সবচেয়ে সহজ আর উপযুক্ত পদ্ধতি হচ্ছে ভাপ দেওয়া পদ্ধতি। সাতকরা কেটে রসালো লেবুর অংশ ফেলে দিয়ে ১২-১৪ টুকরা করে শুধু পানিতে ৮-১০ মিনিট জাল দিয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। ঠাণ্ডা হলে যেকোনো একটি পাত্রে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিন।
এমনভাবে সাজিয়ে রাখবেন যেন প্রয়োজন হলে এক টুকরাও নিতে পারেন। একই নিয়মে কয়েক মাস রাখলেও সাতকরার স্বাদ-গন্ধ অটুট থাকে। এতে একদম কাঁচা সাতকরা রান্নার স্বাদই পাওয়া যায়।
0 Comments
আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ।