দেশি এবং বিলিতি দুই জাতের গাবের মধ্যে বিলিতি গাবের কদর বেশি। গাঢ় বেগুনি-লাল বিলিতি গাব ইউরোপে বাটার ফ্রুট বা ভেলভেট আপেল নামে পরিচিত। মখমলের মতো রোমযুক্ত খোসা ছাড়াতে থাকলে মিষ্টি ঘ্রাণ মুহূর্তেই মন কেড়ে নেয়। দুধ-সাদা ফল খেতে ততটা মিষ্টি না হলেও মুখে দিলেই মাখনের মতো গলে যায়। সুস্বাদু গাবের অনেক পুষ্টিগুণও রয়েছে। ডায়বেটিস, হৃদ্রোগ থেকে শুরু করে নানা অসুখ-বিসুখ প্রতিরোধ করে এই ফল।
গ্রামে-গঞ্জে এক সময় সর্বত্রই গাব মিলত। তেমন অর্থনৈতিক গুরুত্ব ছিল না এই ফলের। কিন্তু আজকাল শহর এলাকায় ফেরিওয়ালার ভ্যানে করে গাব বিক্রি করেন। আবার অনেক অভিজাত ফলের দোকানেও গাব পাওয়া যায়। আর স্বাদে অতুলনীয় গাবের চাহিদাও বাড়ছে দিন দিনই। স্বাদ ও পুষ্টির কথা বিবেচনা করে মৌসুমি এই ফল খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন সবাই।
প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্য-উপযোগী গাবে রয়েছে ৫০৪ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ৮৩ থেকে ৮৪ গ্রাম জলীয় অংশ, ২ দশমিক ৮ গ্রাম আমিষ, শূন্য দশমিক ২ গ্রাম চর্বি, ১১ দশমিক ৮৮ গ্রাম শর্করা, ১ দশমিক ৮ গ্রাম খাদ্য আঁশ, ১১ দশমিক ৪৭ গ্রাম চিনি, ৪৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৩৫ আইইউ ভিটামিন-এ, ১৮ মিলিগ্রাম ফসফরাস, শূন্য দশমিক ৬ মিলিগ্রাম লোহা, শূন্য দশমিক ২ মিলিগ্রাম থায়ামিন, ১৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি, ১১০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ৩০৩ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম।
গাবের এসব পুষ্টিগুণ আমাদের শরীরকে রক্ষা করে নানা রোগ থেকে। বিশেষ করে গাবে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট যা সর্দি, জ্বর, কফ-কাশি থেকে শরীরকে রক্ষা করে। উচ্চমাত্রায় খাদ্যশক্তি থাকায় গাব শারীরিক দুর্বলতা কমায়। গাবে থাকা ক্যালসিয়াম হাড়কে মজবুত করে। রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও গাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গাবে প্রচুর আঁশ থাকায় কোষ্ঠ-কাঠিন্য দূর করে। এতে অন্ত্রের বিভিন্ন রোগ এবং কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমে।
গাবের ফসফরাসসহ নানা খনিজ উপাদান হৃদ্্রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। এ ছাড়া গাবের খোসার রস আমাশয় ও পাতলা পায়খানাও উপশম করে।
লেখক: প্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা
চট্টগ্রাম ডায়বেটিক জেনারেল হাসপাতাল
0 Comments
আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ।