অনলাইন ডেস্কঃ
Time:12:00pm
১১ জ্যৈষ্ঠ,১৪৩০ বঙ্গাব্দ,গ্রীষ্মকাল,- বৃহস্পতিবার, ২৫ মে-২০২৩ খ্রিস্টাব্দ,০৪ জ্বিলকদ, ১৪৪৪ হিজরি।
খ্যাঁদা নাক, বোঁচা নাক, বড়ির মতো নাক, টিয়াপাখীর মতো নাক – নাকের সমস্যার নাকানি চোবানি খাচ্ছেন এমন মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। নাক যেহেতু মুখমণ্ডলের ঠিক মাঝখানে, সুতরাং লুকিয়ে রাখতে গেলে হয় মাস্ক পরতে হবে, নতুবা চম্বলের দস্যুর মতো গামছা দিয়ে মুখ মুড়তে হবে। বহু মানুষ আছেন যাঁরা নাকের গঠন ঠিকঠাক না হওয়ার জন্য হীনমন্যতায় ভোগেন। চান নাক সোজা ও লম্বা করতে। এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার অন্যতম উপায় হল প্লাস্টিক সার্জেনের শরণাপন্ন হয়ে রাইনোপ্লাস্টি করিয়ে নেওয়া।
ফিরে দেখা
রাইনোপ্লাস্টির ইতিহাস বেশ পুরনো। রামায়ণের আমলে সূর্পনখা থেকে যার শুরু। মধ্যযুগে রাজামশাইরা তো প্রজাদের নাক কেটে শাস্তিবিধান করতেন। আর হাল আমলে টুনটুনির বইয়ে রাজামশাই স্বয়ং নাক খুইয়েছিলেন। ভারতীয় চিকিৎা সুশ্রুত কপাল থেকে চামড়া নিয়ে নাক তৈরির বিধান দিয়েছিলেন, যা কিনা ইন্ডিয়ান রাইনোপ্লাস্টি বলে বিখ্যাত। গৌরচন্দ্রিকা ছেড়ে এবার কাজের কথায় আসি।
প্রয়োজনীয়তা
রাইনোপ্লাস্টি সাধারণত তিন ধরনের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় -
১) জন্মগত ত্রুটি সংশোধন
২) আঘাতজনিত ত্রুটি সংশোধন এবং
৩) জন্মগত ভাবে থাকা কাটা ঠোঁট ও তালু সংশোধন।
দাগ থাকে না
শরীরের যে কোনও অস্ত্রোপচারের পরে দাগ থেকে যাওয়াটা স্বাভাবিক। এই ভিত্তিতে সাধারণ মানুষের মনে একটা ভুল ধারণা রয়েছে যে রাইনোপ্লাস্টি যেহেতু একটি অস্ত্রোপচার, তাই এর পরেও নাকে বা মুখে দাগ থেকে যাবে। সবিনয়ে এবং স্পষ্ট করে প্রথমেই একটা কথা জানাই যে, ধারণাটি একেবারে সঠিক নয়। রাইনোপ্লাস্টির পরে শরীরে একটুও দাগ থাকে না।
কেন দাগ থাকে না
রাইনোপ্লাস্টির জন্য যে ধরনের অস্ত্রোপচার করা হয়, তা সবই নাকের ভেতর দিয়ে দিয়ে কিংবা ঠোঁটের নিচ দিয়ে করা হয়। তাই বাইরে থেকে দাগ বোঝার কোনও প্রশ্নই নেই। এটি সম্পূর্ণ স্কারলেস সার্জারি।
ইমপ্ল্যান্ট প্রয়োগ
নাকের বিভিন্ন সংশোধনে সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হল আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিদেশি ইমপ্ল্যান্টের প্রয়োগ করা। নাকের তলা দিয়ে ০.৫ সেমি মতো অল্প একটু কেটে নাকের ওপরে ইমপ্ল্যান্ট বসিয়ে দেওয়া হয়। সাদারণত এতে তোনও সমস্যা হয় না। সিলিকন ছাড়াও মেডপোর (Medpore)-এরও ব্যবহার আছে। কৃত্রিম ইমপ্ল্যান্ট হিসেবে আমাদের দেশে এই দুটি ইমপ্ল্যান্টই ব্যবহার করা হয়।
তরুণাস্থি বা কার্টিলেজ প্রয়োগ
যাঁরা কৃত্রিম ইমপ্ল্যান্ট ব্যবহার করতে চান না কিংবা যাঁদের পক্ষে এই পদ্ধতি উপযুক্ত নয়, তাঁদের ক্ষেত্রে বোঁচা নাক উঁচু করার জন্য কার্টিলেজ বা তরুণাস্থি ব্যবহার করা হয়।
সময়
ইমপ্ল্যান্ট লাগিয়ে বোঁচা নাক উঁচু করা হলে সিংহভাগ রোগীকে সেদিনই ছেড়ে দেওয়া হয়। যেহেতু নাকের ওপরে একটা কৃত্রিম জিনিস লাগানো হল, তাই যাতে বাইরে থেকে আঘাত না লাগে সেই কারণে নাকের ওপরে একটা প্লাস্টার লাগিয়ে দেওয়া হয়। চার-পাঁচ দিন পরে প্লাস্টার খুলে দেওয়া হয়। অস্ত্রোপচারের কারণে নাকে বা মুখে একটা ফোলা ভাব আসতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে নাকের বা মুখের এই ফোলা ভাব কমতে পাঁচ-সাত দিন সময় লাগে। তবে এক-দুই দিনের মধ্যে রোগী স্বাভাবিক কাজ করার উপযুক্ত হয়ে ওঠেন। চাইলে অফিসেও যেতে পারেন।
যে ভাবে করা হয়
এবারে একে একে দেখা যাক বিভিন্ন ক্ষেত্রে কিভাবে রাইনোপ্লাস্টি করা হয়।
বোঁচা নাক – বোঁচা নাক উঁচু বা ঠিক করতে গেলে নাকের চামড়ার নিচে সিলিকন ইমপ্ল্যান্ট দেওয়া হয়। এটি খুবই নিরাপদ। যাঁরা সিলিকন চান না তাঁদের জন্য নাক বা বুকের থেকে কার্টিলেজ বা তরুণাস্থি নিয়ে বসিয়ে দেওয়া হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেই দিনেই রোগীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাইরে বা নাকের ওপরে কোনও দাগ থাকে না।
বাঁকা নাক – জন্মগত ভাবে বা আঘাত লেগে নাক বাঁকা হতে পারে। এই অপারেশন অজ্ঞান করে করতে হয়। এ-ক্ষেত্রেও নাকে বা বাইরে কোনও কাটা দাগ থাকে না। দুই দিকের হাড় ফ্র্যাকচার করে সোজা করা হয় ও প্রয়োজন মতো ওপরে বা সামনে কার্টিলেজের সাপোর্ট দেওয়া হয়। অপারেশনের পরে নাকের ওপরে একটি ছোট প্লাস্টার চার-পাঁচ দিন রাখতে হয়।
বড়ির মতো নাক – নাকের এই ধরনের সার্জারিকে টিপপ্লাস্টি বলে। এ-ক্ষেত্রে আদতে নাকের পাতার দু’পাশের কার্টিলেজগুলি বড় হয় ও মাঝের ফাঁক অনেকটা বেশি থাকে। সার্জারির সাহায্যে পাতার কার্টিলেজগুলিকে কার্টিলেজ ছোট করার পরে মাঝখানে এনে সেলাই করে দিলেই নাক সরু ও টিকালো হয়ে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সে-দিনই বাড়ি চলে যাওয়া যায়। বাইরে কোনও দাগ থাকে না।
হাম্প কারেকশন – নাকের মাঝখানটা অতিরিক্ত উঁচু হলে অর্থাত্, ব্যোমকেশ ও শার্লক হোমসের মতো হলে হাম্প কারেকশন করে ওপরটা সোজা করা হয়। বাড়তি হাড় ও কার্টিলেজ বাদ দিয়ে দেওয়া হয়।
কৃতজ্ঞতা- ১) বিশিষ্ট প্লাস্টিক সার্জেন ডাঃ অরিন্দম সরকার ২) ছবির জন্য গুগল
0 Comments
আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ।