নাভি আসলে একটি scar tissueর সমষ্টি। Scar tissue কোনো ক্ষতস্থানকে বন্ধ করতে সৃষ্ট বিশেষ শক্ত কোষ-সমন্বিত কলা, এবং নাভির কাজগুলো আসলে নাভির নয়, ভ্রুণ-অবস্থায় এই স্থানে যে ক্ষত ছিল, তার কাজ।
প্রথমতঃ ভ্রুণের শরীরে রক্ত চলাচলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে এই umbilicus নামক ক্ষত স্থানটি। গর্ভে নিষিক্ত ভ্রুণ নিজেকে প্রতিস্থাপিত করার সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই তার শরীরের রক্ত-চলাচল ব্যবস্থা সৃষ্ট হয়ে হৃৎপিণ্ডের ক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। এখন, হৃৎপিণ্ডের কাজ হল ফুসফুসে অশুদ্ধ রক্ত পরিশোধনের জন্য পাঠানো, এবং পরিশোধিত রক্ত শরীরের সর্বত্র ব্যবহারের জন্য পাঠানো। ভ্রুণের ফুসফুস থাকে চুপসানো অবস্থায়, কারণ সে গর্ভের থলির মধ্যে থাকে এবং সেই পরিমণ্ডলে নিশ্বাস নেওয়ার জন্য কোনো বাতাস থাকে না। তাই সে পরিশোধিত রক্ত গ্রহণ করে মায়ের থেকে, গর্ভফুল থেকে তৈরি হওয়া একটি নাভি-শিরার(umbilical vein) মাধ্যমে, এবং অশুদ্ধ রক্ত পরিশোধনের জন্য ফেরত পাঠায় তার হৃৎপিণ্ড সেই মায়ের রক্তস্রোতেই, গর্ভফুলের মাধ্যমে, দুটি নাভি-ধমনীর(umbilical arteries)দ্বারা।
নাভির মাধ্যমে ভ্রুণের শ্বাস-প্রশ্বাস।
(নাভিরজ্জুর মধ্যে Wharton's Jelly ও Umbilical Blood Vessels)
দ্বিতীয়তঃ এই ক্ষতস্থানটির আরও একটি কাজ আছে, যা হয়তো কম মানুষই জানেন(জীববিজ্ঞান অথবা চিকিৎসা ক্ষেত্রে যুক্ত মানুষ ছাড়া)। আমাদের বৃহদান্ত্রের গঠন লক্ষ্য করলে বোঝা যায় যে এটি একটি বড় নালিকা, কিন্তু এর চার জায়গায় চারটি মোড় রয়েছে - caecum, hepatic flexure, splenic flexure, sigmoid colon - এবং ভ্রুণের ক্ষুদ্র উদরে এই সমস্ত মোড়-সহ বিরাট বৃহদান্ত্র তৈরি হওয়ার মত যথেষ্ট জায়গা থাকে না। তাই গর্ভাবস্থায় ভ্রুণের পাচনতন্ত্র তৈরি হওয়ার সময়ে এক পর্যায়ে বৃহদান্ত্র বাইরে বার হয়ে এসে আয়তনে বৃদ্ধি ও আকারে পরিবর্তিত হতে থাকে, এবং তা হয়ে গেলে আবার তা উদরের ভিতরে ফেরত চলে যায়। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় physiological herniation of the midgut loop via the umbilicus(বিস্তারিত ভাবে নিচের videoতে দেওয়া আছে)।
(Physiological Herniation of the Midgut Loop via the Umbilicus)
অনেক ক্ষেত্রে অন্ত্রের কিয়দংশ উদরের গহ্বরের অভ্যন্তরে ফেরত যেতে অক্ষম হয়। এই সব শিশুরা congenital umbical hernia নিয়ে জন্মায় এবং কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়।
(শিশুর দেহে জন্মগত umbilical hernia; অনেক বড়দেরও এই রোগ হতে পারে, বিশেষতঃ বয়স্ক মানুষদের, যাঁদের একাধিক বার পেটের অস্ত্রোপচার, মেদবাহুল্য, বয়স ইত্যাদি কারণে পেটের মাংসপেশী শিথিল হয়ে গিয়েছে)
(Omphalocoele : একটি বিশেষ ও গুরুতর ধরনের congenital umbilical hernia)
এটা বলা বাহুল্য যে জন্মের পর নাভির প্রাকৃতিক ভাবে কোনো কাজ থাকে না। তখন এটা জীবাণুর বিচরণস্থল ছাড়া আর কিছু নয়। প্রত্যেক ব্যক্তির নাভির bacteriological signature এক প্রকার unique বলা চলে।
প্রসঙ্গতঃ নাভি অর্থাৎ umbilicus শুধু মানুষের থাকে এমন নয় - সমস্ত placental mammals(যে সব স্তন্যপায়ী প্রাণীদের শরীরে গর্ভাবস্থায় গর্ভফুল তৈরি হয়)দের বৈশিষ্ট্য। বাড়িতে বা পাড়ায় কোনো পোষ্য বা পরিচিত কুকুর বা বিড়াল থাকলে, আপনারা সহজেই তাদের শরীরের নিম্নভাগ পরীক্ষা করে দেখতে পারেন(অবশ্যই তাদের বিরক্তির কারণ না হয়ে)। নাভি তাদেরও থাকে, তবে গোটা দেহ পশমে ঢাকা থাকে বলে চট করে নজরে পড়ে না।
ওদের মায়েরা জন্মের পর দাঁত দিয়ে টেনে নাভিরজ্জু কেটে সন্তানদের গর্ভফুলের থেকে আলাদা করে। কাটা অংশ শিশুর পেটের অনেকটা কাছাকাছি হয় বলে ক্ষতস্থান ছোট হয়, তাই দেখা যাওয়া কঠিনও বটে। তুলনায় মানুষের নাভি কিঞ্চিৎ বড় হয়, কারণ আমাদের নাভিরজ্জু কাটা হয় অস্ত্রের মাধ্যমে, শিশুর পেটের দেওয়ালের থেকে দূরে।
সূত্রঃ-দৈনিক প্রথম আলো
0 Comments
আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ।