পেঁয়াজের উপকারীতা সম্পর্কে অজানা তথ্য

টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করা পুষ্টিবিদ জারযাবকোভস্কি জানান পেঁয়াজ বিভিন্ন ভাবে হার্ট সুস্থ্য রাখার বিষয়টিকে সাহায্য করে। "এর মধ্যে রক্ত চাপ কমানো এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমানো রয়েছে।" 2002 সালে প্রকাশিত জার্নাল থ্রম্বসিস রিসার্সে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায় সালফার রক্ত পাতলা করে আর রক্তের প্ল্যাটিলেটকে দলা বাধতে বাঁধা দেয়। যখন প্ল্যাটিলেট দলা বাঁধে তখন হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে। 1987 সালে জার্নাল অব হাইপারটেনশন এ প্রকাশিত প্রাণীদের উপর চালানো একটি গবেষণার ফলাফলে দেখা যায় সালফার গ্রহনে হাইপারটেনশন কমে।

সম্প্রতি, গবেষকরা বার্তাবাহক অনু যাকে বলা হয় অক্সিলিপিড তার সঙ্গে উঁচু মাত্রার কোলস্টেরল ব্যবস্থাপনার সম্পর্ক অনুসন্ধান করেছেন। 2016 সালে জার্নাল রিডক্স বায়োলজিতে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায় পেঁয়াজ খেলে অক্সিলিপিন বাড়ে যা রক্তে চর্বির মাত্রা এবং কোলস্টেরলের মাত্রা কমায়। মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা বিভাগের মতে পেঁয়াজে থাকা কোয়ারসেটিন ধমনীতে প্লাক তৈরিতে বাঁধা দিতে পারে যা হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে পারে। এই গবেষণাটি প্রাণীদের উপর চালানো হয়েছে বলে এ বিষয়ে আরো গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।

1990 সালে ইন্টারন্যাশনাল আর্কাইভস অব অ্যালার্জি এন্ড অ্যাপ্লাইড ইমিউনোলোজি’তে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায় পেঁয়াজে থাকা সালফার প্রদাহ রোধে কার্যকর হতে পারে। 2013 সালে অ্যামেরিকান জার্নাল অব ফিজিওলোজি’তে প্রকাশিতেএক গবেষণায় দেখা যায় কোয়ারসেটিন এয়ারওয়ে মাসেলগুলোকে শিথিল করে এবং এতে অ্যাজমার লক্ষণগুলো কমতে পারে।

"পেঁয়াজে থাকা পলিফেনল অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের কাজ করে ফ্রি র‌্যাডিকালের বিরুদ্ধে শরীরকে রক্ষা করে।" বলে ওয়াশিংটন ভিত্তিক এক ডায়েটেশিয়ান আন মউনি জানিয়েছেন। পেঁয়াজ ফ্রি র‌্যাডিকালে দূর করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সাহায্য করে। ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড মেডিক্যাল সেন্টারের তথ্য মতে শরীরে হিস্টামিন তৈরি করা বন্ধ করে পেঁয়াজ অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া বন্ধ করে। যদি আপনার অ্যালার্জি থাকে তাহলে হিস্টামিনের কারণে আপনার হাঁচি পায় ও চুলকানি হয়।

অনেকগুলো গবেষণা থেকে পাওয়া এক তথ্যের উপর ভিত্তি করে 2015 সালে চালানো এক গবেষণায় দেখা যায় পেঁয়াজ ও রসুন জাতীয় সবজি গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। জর্জ ম্যাটেলজান ফাউন্ডেশনের মতে পৃথিবীর সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকায় থাকা পেঁয়াজ মলদ্বার, বাগযন্ত্র এবং ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে। দিনে বার কয়েক পেঁয়াজ খেলে মুখ ও খাদ্যনালীর ক্যান্সারের ঝুঁকি কমতে পারে। দ্য ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড মেডিক্যাল সেন্টারের মতে কোয়ারসেটিন সম্ভবত বিশেষকরে “স্তন, মলাশয়, প্রোস্টেট, ডিম্বাশয়, জরায়ুর ভিতরের স্তর এবং ফুসফুসের টিউমার” এর ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ দমন করে।

দ্য ন্যাশনাল ওনিয়ন অ্যাসোসিয়েশন সম্প্রতি নেদারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত একটি গবেষণার বিষয় আলোচনা করে তাতে দেখা যায় যারা পেঁয়াজ খায় তাদের শরীরে যারা চা পান করে তাদের চেয়ে দ্বিগুন কোয়ারসেটিন শোষিত হয়, যারা আপেল খায় তাদের চেয়ে তিনগুনের বেশি কোয়ারসেটিন শোষিত হয়। আপেলও উঁচু মাত্রায় কোয়ারসেটিন থাকে। লাল পেঁয়াজে বেশি কোয়ারসেটিন থাকে। পেঁয়াজ ক্যান্সার চিকিৎসার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কমাতে সাহায্য করে। 2016 সালে ইন্টিগ্রেটিভ ক্যান্সার থেরাপি’তে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায় তাজা হলুদ পেঁয়াজ খেলে স্তন ক্যান্সারের কারণে যাদের কেমোথেরাপি দেয়া হয় তাদের ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এবং হাইপারগ্লাইসেমিয়া কমায়। পেঁয়াজের আঁশ হজমে সাহায্য করে। পেঁয়াজে একটি বিশেষ ধরণের দ্রবনযোগ্য আঁশ থাকে একে ওলিগোফ্রাকটোজ বলে। এটি আপনার খাদ্যনালীতে একটি ভালো ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ক্লিনিক্যাল গ্যাস্ট্রোএনটেরোলোজি এন্ড হেপাটোলজি’তে 2005 সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায় ওলিগোফ্রাকটোজ এক ধরণের ডায়রিয়া প্রতিরোধ করতে পারে। পেঁয়াজে থাকা ফাইটোকেমিক্যালস গ্যাস্ট্রিক আলসার রোধ করতে পারে বলে ন্যাশনাল ওনিয়ন অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে।
পেঁয়াজে থাকা ক্রোমিয়াম রক্তের চিনি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। পেঁয়াজে থাকা সালফার ইনসুলিন উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়ে রক্তে চিনির পরিমান কমাতে সাহায্য করে। 2010 সালে জার্নাল এনভারমেন্টাল হেল্থ ইনসাইটস এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায় ডায়বেটিসের রোগিদের জন্য বিষয়টি খুব উপকারি। যাদের টাইপ 1 এবং টাইপ 2 ডায়বেটিস আছে তারা যদি লাল পেঁয়াজ খায় তাহলে 4 ঘন্টা পর্যন্ত তাদের চিনির মাত্রা কম থাকে। অনেকগুলো গবেষণার তথ্য উপাত্ত নিয়ে চালানো এক গবেষণা জার্নাল নিউট্রিশনে 2014 সালে প্রকাশিত হয় তাতে দেখা যায় টাইপ 2 ডায়বেটিসের রোগিদের পেঁয়াজ খেতে দিলে তাদের লিভার এনজাইম অনেক বেশি স্বাভাবিক এবং গ্লাইসেমিক কম মাত্রায় থাকে।

ক্যান্সার থেকে দূরে থাকার একটি নতুন মন্ত্র পাওয়া গেছে। রুবি রিং ওনিয়ন সব ধরণের পিঁয়াজের থেকে এ ব্যাপারে এগিয়ে রয়েছে বলে গুলেফ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানিয়েছেন। পিঁয়াজে কেয়েরসেটিন নামে একটি ফ্লাভনয়েড বেশি পরিমাণে রয়েছে। রুবি রিং পিঁয়াজে এই ফ্লাভনয়েডটি বেশি পরিমাণে রয়েছে। ফ্লাভনয়েড হচ্ছে একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট যা প্রদাহনাশক এবং রোগপ্রতিরোধক।

ফুড রিসার্চ ইন্ট্যারন্যাশনালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে গবেষকদল বিভিন্ন ধরণের পিঁয়াজের থেকে কোয়েরসেটিন আহরণ করেছেন। আর এটিকে সরাসরি কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত কোষের উপর প্রয়োগ করেছেন।

"আমরা দেখেছি ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ হত্যার ব্যাপারে পিঁয়াজ চমৎকার কাজ করে। পিঁয়াজ এমন উপায় তৈরি করে যাতে ক্যান্সার কোষগুলো মারা যায়। এগুলো ক্যান্সার কোষের জন্য প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি করে এবং ক্যান্সার কোষগুলোর যোগাযোগে বাঁধা দেয় যাতে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি ব্যহত হয়।” আবলুমোনেম মুরাইয়ান নামে এক পিএইচ. ডি’র ছাত্র জানান। এর সাথে সাথে দলটি আবিষ্কার করেছে লাল পিঁয়াজ অ্যান্থোসায়ানিন সমৃদ্ধ। অ্যান্থোসায়ানিন কোয়েরসেটিন নামক অনুতে সমৃদ্ধ। কোয়েরিসেটিন কোষের পরিচ্ছন্নতাকারী হিসেবে কাজ করে।
পিঁয়াজ স্তন ক্যান্সারের বিরুদ্ধেও কাজ করে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন।

Post a Comment

0 Comments