কটন দিয়ে কান খোঁচানো কতোটা নিরাপদ?

কটনবাড কান পরিষ্কার করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি কর।

কান চুলকানোর প্রথম কারণ হতে পারে এক্সটার্নাল অডিটরি ক্যানালে। অর্থাৎ কানের বাইরের যে সরু রাস্তাটা কানের ভেতর পর্দা পর্যন্ত চলে গেছে, সেখানকার কোনো সমস্যা থেকে। অনেকের এই রাস্তার চামড়া শুষ্ক থাকে। এই শুষ্কতার কারণে কান চুলকাতে পারে। অনেকের গোসলের সময় পানি ঢুকে বা গরমের সময় ঘাম ঢুকে চুলকাতে পারে। অনেকের আবার কানের খৈল জমে গিয়ে কান চুলকাতে পারে। কারও কারও নানা রকম চর্ম রোগের সংক্রমণ হয়ে কান চুলকাতে পারে।এরপর কানের পর্দা। কানের পর্দার নানা সমস্যার কারণে কান চুলকাতে পারে। কানের পর্দার দুপাশের বায়ুচাপের তারতম্যের ফলে কান চুলকাতে পারে। কানের পর্দার পেছনে কফ বা পানি জমে গিয়ে কান চুলকাতে পারে। কানের পর্দা ফেটে গিয়ে, কানের সংক্রমণ হয়ে কান চুলকাতে পারে। এবং বিভিন্ন কারণে কান চুলকাতে পারে স্বাভাবিক ভাবে আমরা অনেক সময় কটন দিয়ে কান খোঁচায়।কটন বাড দিয়ে কান পরিষ্কার করা মোটেও কাজের কথা নয়। এমনকী বিশেষজ্ঞরাও এই বিষয়টি বারবার বলে থাকেন যে, কান চুলকালে সাধারণত, কান কটন বাড দিয়ে পরিষ্কার করার যে প্রবণতা রয়েছে তা একেবারেই ভাল অভ্যায় নয়।

কটনবাডের কারণে সৃষ্ট কানের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার উদাহরণ দেওয়া যাবে। যারা কটনবাড ব্যবহার করেন তাদের প্রায় সবাই পরম ভক্তি ভরে কাজটি করে থাকেন। প্রথমত তারা মনে করেন কান করা স্বাস্থ্য কর্মেরই একটি অংশ। এটি করার মাধ্যমে তারা নিজেকে স্বাস্থ্যসচেতন হিসেবে উপস্থাপন করে থাকেন। এদের প্রায় সবাই মনে করেন, কান পরিষ্কারের জন্য কটনবাড খুবই যথার্থ, নিরাপদ, জীবাণুমুক্ত ও আধুনিক একটি উপকরণ। একসময় যেখানে কান চুলকানোর জন্য মুরগির পালক (ক্ষেত্রবিশেষে পবিত্রতার বিবেচনায় কবুতরের পালক), চুলের ক্লিপ, পেন্সিলের মাথা, টুথপিক, পানের বোঁটা, কচুর ডগা ইত্যাদি যা কিছু হাতের কাছে পাওয়া যেত তাই দিয়ে কান চুলকানো হতো, এখন সেখানে কটনবাডের ব্যবহার যেন বিজ্ঞানের আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। এসব নানা কারণে কটনবাড খুবই সমাদৃত ও প্রয়োজনীয় একটি উপকরণ হিসাবে পরিগণিত হচ্ছে। অথচ এই কটনবাড কানে মলম দেওয়ার কাজ ছাড়া আর কোনো ভাল কাজে লাগে বলে মনে হয় না। বরং কটনবাড ব্যবহারে ক্ষতির পরিমাণই বেশি।

কানের ময়লাকে পর্দার কাছে ঠেলে আর তরুণাস্থিকে আঘাত করে ক্ষতি করে কটন বাডস। “কটন বাডের তুলো অসাবধানতায় কানে ঢুকে গিয়ে মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে। অনেক সময়ই অস্ত্রোপচারের সাহায্য নিতে হয় এমন বিপদে।

বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় সাত হাজারের মতো মানুষ কটন বাড ব্যবহারের কারণে অসুস্থ হন। কটন বাড ব্যবহারকারীদের মধ্যে বেশিরভাগই এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানেন না। শতকরা মাত্র ৩৬ শতাংশ ব্যবহারকারী এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে অবগত। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, এরপরও তারা কান পরিষ্কারের কাজে কটন বাড ব্যবহার করে থাকেন। মার্কিন চিকিৎসক ড. ক্রিস্টোফার চ্যাং এর মতে, নিয়মিত যারা কটন বাড ব্যবহার করেন তাদের কানের এয়ারড্রাম মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কটন বাড ব্যবহারের কারণে কানে প্রচণ্ড ব্যথা দেখা দিতে পারে, এমনকি হতে পারে রক্তপাতও।

কটন বাড আপনার কানের নরম পর্দার ক্ষতি করে শ্রবনশক্তি পাকাপাকিভাবে নষ্ট করে দিতে পারে। এ ছাড়াও কান চুলকানো বা পরিষ্কার করার সময় কানের ভেতরে তুলো থেকে যাওয়ার ঘটনা তো আছেই।কটন বাড ব্যবহারের ফলে কানের ভেতরের ময়লা যতটা না বের হয়, তারও চেয়ে বেশি ভেতরে ঢুকে যায়।অনেক ক্ষেত্রে এসব ময়লা কানের পর্দার কাছাকাছি বা পর্দার ওপর স্তর আকারে জমে যায়। তখন সেই ময়লা কানের পর্দায় ব্লক হয়ে যায়, যাকে বলে ইম্প্যাক্টেড ওয়াক্স।কানের সামনের দিকে যেসব ময়লা থাকে, সেগুলো কটন বাড দিয়ে পরিষ্কার করা হয়তো সম্ভব; কিন্তু ভেতরের ময়লা পরিষ্কার করা সম্ভব নয়।

গবেষণা বলছে, কটন বাড উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হয়। কানের সমস্যা নিয়ে ডাক্তারদের কাছে যে লম্বা লাইন পড়ে তার মধ্যে অনেকেরই সমস্যার কারণ কটন বাড ব্যবহার। কটন বাড ব্যবহারের ফলে কানের ভিতরের ময়লা আরও বেশি ভিতরে ঢুকে যায়।কান পরিষ্কারে কটন বাডের কোনো প্রয়োজন নেই জানিয়ে দ্রুত এটি ব্যবহার বন্ধ করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

Post a Comment

0 Comments