আপনি যদি ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চান তবে শরীরের ক্যালোরি পোড়াতে হবে। যাকে আরেকভাবে বলতে পারি প্রোটিন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে আপনাকে। ‘দ্য প্রোটিন টেলার প্ল্যান : দ্য নো ডায়েট রিয়েলিটি গাইড টু ইটিং, চিটিং, লুজ ওয়েট পারমানেন্টলি’ বইয়ের লেখক ডক্টর লাইসা ইয়ং জানান, প্রোটিন নিয়ন্ত্রণ করার মানে এই নয়, আপনি সবসময় প্রোটিন জাতীয় খাবার বাদ দেবেন বা অল্প খাবেন।
স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েব পোর্টাল হেলথডটকমের একটি রিপোর্টে বলা হয়, নিয়মিত প্রোটিন খেয়েও মাত্র ১৪টি কৌশল মেনে চললে আপনি প্রোটিন জাতীয় খাবার কম গ্রহণ করতে পারবেন। এতে একেবারেই মনে হবে না ডায়েট করছেন।
১. শুরু করুন পানি দিয়ে : ডায়েট বিশেষজ্ঞ ডন জেকসন ব্লাটনার বলেন, খাওয়ার আগে ১৬ আউন্স (একটি বড় গ্লাসে) পানি খেয়ে নিন।এতে আপনার পেট ভরা ভরা লাগবে। তখন ক্ষুধা লাগলেও আপনি কম খাবেন।
২. আঁটসাঁট পোশাক পরুন : ডক্টর ইয়ং বলেন, আমরা বলছি না এমন পোশাক পরুন যা খুব টাইট। তবে কিছুটা আটঁসাট পোশাক পরার পরামর্শ দেন তিনি। যদি আপনি পেন্ট পরেন তবে খাওয়ার আগে ভাবুন বেশি চিনি খেলে আপনার কোমরবন্ধনী আরেকটু ঢিলে করতে হবে। এটি ভেবেও আপনার খাবার একটু কম হতে পারে।
৩. সবজি খেয়ে পেট ভরুন : খাওয়ার শুরুতে বেশি করে সবজি খান।এটা ক্যালরি জাতীয় খাবারকে এড়িয়ে যাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায়। মাংস জাতীয় খাবার খাওয়ার আগে সবজির তরকারি দিয়ে খাবার শুরু করতে পারেন।
৪. থালা আর খাবারের রং : ২০১২ সালের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা যায়, থালার রং যদি খাবারের রঙের কাছাকাছি হয় তাহলে বুফেতে মানুষ ২২ শতাংশ খাবার নিয়ে ফেলে। সাদা প্লেটে সাদা ভাতের কথা চিন্তা করুন। কিন্তু প্লেট ও খাবারের কনট্রাস্ট বেশি হলে আপনি কম খাবেন। ধরুন সাদা প্লেটে খাচ্ছেন লাল সস মেশানো পাস্তা। অতএব কম খেতে চান? খাবারের সঙ্গে কনট্রাস্ট প্লেট ব্যবহার করুন।
৫. উল্টে দিন খাবারের পরিবেশন : থালায় খাবারের বেজ থাকে এরপর থাকে টপিং। সাধারণত ভাতের ওপর অল্প একটু সবজি। এই তো চিরচেনা পরিবেশন। কিন্তু একে যদি উল্টে দেন- আগে সবজি উপরে অল্প একটু ভাত- তাহলেও কম স্টার্চ খাওয়া হবে।
৬. ধীরে ধীরে খান : ডিম লাইটের আলোয় কোনো রিল্যাক্সিং মিউজিক শুনতে শুনতে খাবার গ্রহণ করুন। এটা আপনার খাবার খাওয়ার গতিকে অলস করে তুলবে। ফলে কম খাবেন আপনি।
৭. খেটে খুটে খান : খাবার ধীরে ধীরে খাওয়ার আরেকটি পন্থা হচ্ছে খেটে খুটে খাওয়া। যেমন : কমলালেবু, ডাব বা বাদাম ইত্যাদি খাবারের খোসা ছাড়িয়ে খান। পরিশ্রমে খাওয়ার ইচ্ছা কমে যেতে পারে।
৮. সব খাবার একবারে নয়: যখন আপনি একটি ব্যাগভর্তি চিপস খেতে বসেন তখন কি আসলেই জানেন কতটুকু খাচ্ছেন? কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানিয়েছেন, কখনোই ব্যগের সম্পূর্ণ খাবার খাবেন না। ১০ শতাংশ রেখে দিন পরে খাওয়ার জন্য।
৯. শুরু করতে পারেন স্যুপ দিয়ে : খাবার শুরুর প্রথমেই স্যুপ খান। গবেষকরা জানান, খাবারের শুরুতে স্যুপ খেলে শরীরে ক্যালরি কম নিতে সাহায্য করে।২০০৭ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে স্যুপের কারণে শরীর ২০ শতাংশ ক্যালরি কম নেয়।
১০. বুফেতে গেলে আগে দেখে নিন : গবেষণায় দেখা গেছে লোকজন বুফেতে গেলে প্রথম দিককার ভারি খাবারগুলো দিয়ে প্লেট ভরে ফেলে। কিন্তু পরে যে লো ফ্যাট খাবার থাকে সেগুলো আর খাওয়া হয় না। ফলে বুফেতে গেলে আগে ঘুরে দেখেন কী আছে এবং লোক্যালরির কী খাবার আছে। তারপর এমনভাবে বেছে নিন যাতে পেট ভারি না হয়ে যায়।
১১. লম্বা গ্লাসে খান : কোনো পার্টিতে গেলে ককটেল পানীয় তো খেতেই হয়। তো এই পানীয় নেবেন এক লম্বা গ্লাসে এবং চুমুক দেবেন খুব ধীরে ধীরে। নিজেকে ফাঁকি দিন এবং ভাবুন অনেক পানীয় খাচ্ছেন। নতুন গ্লাসে পানীয় নেবেন না।
১২. খাবার সময় খাবারেই মন দিন : যখন খাবেন তখন টেলিভিশন বন্ধ রাখুন এবং আপনার স্মার্টফোনটিকেও দূরে রাখুন। আপনি যদি অফিসে থাকেন তো ডেস্কে খাবার খাবেন না। এক গবেষণায় দেখা গেছে টেলিভিশন খুলে, স্মার্টফোন ব্যবহার করতে করতে অথবা ডেস্কে কম্পিউটারে খেলতে খেলতে যদি খাবার খান তাহলে বেখেয়ালে বেশি খাওয়া হয়ে যায়। অতএব খাওয়ার সময় মনোযোগ দিয়ে খাবারই খান।
১৩. ছোট থালায় খান : ছোট থালায় খাবার খান। গবেষণায় পুষ্টিবিদরা দেখেছেন ছোট থালায় খাবার বাড়লে বেশি মনে হয় এবং আসলে কম খাওয়া হয়।
১৪. ডেজার্টে চা : অনেকেই খাবারের শেষে একটু মিষ্টি খেতে পছন্দ করেন। এই অভ্যাসটাকে একটু নতুনভাবে ভাবা যায়। খাবার শেষে কোনো মিষ্টি জাতীয় খাবারের বদলে আপনি পছন্দের কোনো স্বাদের চা খেয়ে নিন।
সূত্রঃপ্রথম আলো
0 Comments
আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ।