দেনমোহর ইসলামের বিয়ের প্রধান শর্ত ও দেনমোহর পরিশোধ করা ফরজ।দেনমোহর পরিশোধ ব্যতীত বিয়ে সম্পন্ন হয় না।
দেনমোহর হিসেবে স্বর্ণের পাহাড় দেয়াও বৈধ।
মহানবী(স) এর বিয়ের দেনমোহর
মহানবী(স) ও উম্মে হাবিবা(রা) এর বিয়ের দেনমোহর ছিলো ১২ লাখ ৪৯ হাজার ৫০০টাকা।
খাদিজা (রা.)-এর সঙ্গে বিবাহ সম্পন্ন হলো, খাওয়াদাওয়ার আয়োজন ছাড়াও শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়-স্বজনের জন্য রাসুল (সা.) কাপড়চোপড় দিয়েছেন এবং খাদিজা (রা.)-কে ২০টি উট মোহরানাস্বরূপ দিয়েছিলেন। (সীরাতে ইবনে হিশাম, খ. ১, পৃ. ২৪৩)
হিজরতের কিছু আগে সাওদা (রা.) ও আয়েশা (রা.)-কে বিবাহ করেছিলেন এবং প্রত্যেককে গড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ দিরহাম মোহরানা দিয়েছিলেন, যা প্রায় ১৩১ তোলা তিন মাশা রুপার সমতুল্য (ইবনে হিশাম, খ. ২, পৃ. ৬৪৩)
ফাতেমা(রা) এর বিয়ের দেনমোহর
ফাতেমা(রা) এর বিয়ের দেনমোহর ৫০০ দিরহাম ছিলো যা বর্তমান হিসেবে প্রায় ১ লাখ ৫৭ হাজার টাকার মতো।
দেনমোহরের কোনো উচ্চসীমা নেই
দ্বিতীয় খলিফা ওমর বিন খাত্তাব সমাবেশে ঘোষণা দেন, 'কেউ খুব ভারী ও বিপুল রকমের মোহর নির্ধারন করবেন না। কারন নবীজী মুহাম্মদ চার’শ দিরহামের বেশি পরিমান মোহর কাউকে দিতে বারন করেছেন।’ তৎক্ষণাৎ এ কথার প্রতিবাদ জানান ওই সমাবেশে আগত এক নারী। তিনি কোরানের ৪:২০ সুরা ও আয়াতের ব্যাখ্যা তুলে ধরে বলেন,“ তুমি যদি একজনের পরিবর্তে অন্য একজনকে স্ত্রী হিসাবে গ্রহন করো এবং যদি প্রথম স্ত্রীকে মোহরানা হিসাবে কয়েক রাশি স্বর্নমুদ্রাও দাও, তাহলে তার এক তিল পরিমানও তুমি সাবেক স্ত্রীর কাছ থেকে ফেরত নিতে পারবে না। খলিফা ওমর সঙ্গে সঙ্গে নিজের কথাটি প্রত্যাহার করে ওই নারীর বক্তব্যটিকে সঠিক বলে মন্তব্য করেন ‘যিনি যে পরিমান মোহর দিতে চান তিনি সে পরিমানই দিতে পারবেন’ (ইবনে হযর আল-আথকালানি, ফাত আল-বারী, ৯:১৬৭”)।
সুতরাং ইসলামে নারীরা নিজ ইচ্ছামতো দেনমোহর দাবী করতে পারবে।সেটা ১০ হাজার টাকা হোক কিংবা ১০ হাজার কোটি টাকা।এ বিষয়ে ইসলাম নারীকে সম্পূর্ণ অধিকার দিয়েছে।
সর্বনিম্ন দেনমোহর
হানাফি মাজহাবের মতে, সর্বনিম্ন মোহর ১০ দিরহাম অর্থাৎ ৩০.৬১৮ গ্রাম রুপা অথবা এর সমপরিমাণ অর্থ।
এ প্রসঙ্গে হাদিস শরিফে এসেছে, ‘দশ দিরহামের কম কোনো মোহর নেই’ (বায়হাকি)।
দশ দিরহাম মোটামুটি ৩৫০০ থেকে ৪০০০টাকার মতো।রূপার দাম যাচাই করে নিবেন,৩০.৬১৮ গ্রাম রূপার সমপরিমাণ মূল্য।
দেনমোহর প্রদানের সময়
দেনমোহর স্ত্রীর সাথে বাসরের আগে পরিশোধ করা ফরজ।মহানবী(স) বিয়ের মঞ্চে জিজ্ঞেস করতেন দেনমোহর পরিশোধ করা হয়েছে কিনা।
ফাতেমা(রা)ও আলী(রা) এর কাছ থেকে বাসরের পূর্বেই দেনমোহর আদায় করেন।
দেনমোহর অনাদায়ে শাস্তি
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোনো মেয়েকে দেনমোহর দেওয়ার ওয়াদায় বিয়ে করেছে, কিন্তু দেনমোহর দেওয়ার ইচ্ছে নেই, সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট ব্যাভিচারী হিসেবে দাঁড়াতে বাধ্য হবে।”- মুসনাদে আহমাদ
কুরআনে দেনমোহর
কুরআনে দেনমোহরের অধিকার প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘হে নবী! আমি তোমার জন্য বৈধ করেছি তোমার স্ত্রীদেরকে, যাদের দেনমোহর তুমি প্রদান করেছো।’ (সুরা আল-আহজাব, আয়াত-৫০)
কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং স্ত্রীদের মোহর মনের সন্তোষসহকারে আদায় করো।’ সূরা নিসা : ৪।
‘আর তাদের ন্যায়সঙ্গত মোহর আদায় করো’- সূরা নিসা : ২৫।
0 Comments
আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ।