থানকুনি পাতার কথা হয়তো আপনারা অনেকেই জানেন কারণ এটি হল ঐতিহ্যগত ও আয়ুর্বেদিক ওষধি গুণ যুক্ত একটি গাছ যা বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়া, চীন ও ভারতবর্ষে হয়ে থাকে। এর অনন্য গুণ ও উপকারিতা মস্তিষ্কের শক্তি বিকাশে অসাধারণ রূপে সাহায্য করে এবং নানারকমের মস্তিস্ক সংক্রান্ত সমস্যায় ওষুধের মত কাজ করে।
থানকুনি পাতার উপকারিতা নানারকম ভাবে প্রমাণিত হয়েছে। নিচে এই সমস্ত উপকারিতাগুলি বিস্তারিত আলোচনা করা হল। চলুন দেখে নেওয়া যাক।
- মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটায়:
প্রতিদিন বেশ খানিকটা করে থানকুনি পাতার রস পান করলে মস্তিষ্কের নানারকম বিকাশ ঘটে যার ফলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা সচল ভাবে চলতে থাকে । বিভিন্ন পশুর ওপরে বৈজ্ঞানিক ভাবে পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে যে স্মৃতিশক্তি ও শেখার ক্ষমতা উন্নত করার জন্যে থানকুনি পাতা বেশ উপকারী। এর সাহায্যে থানকুনি পাতার বিভিন্ন উপাদান নিয়ে এমন কিছু ওষুধ তৈরী করা যায় যা মানুষের স্মৃতি শক্তি ও শেখার ক্ষমতাকেও দারুণ ভাবে উন্নত করে। বুদ্ধির বিকাশ ঘটাতেও এই থানকুনি পাতা দারুণ উপকারী । এছাড়া এর মধ্যে আছে ফলিক এসিডের তুলোনায় আরো বেশি শক্তিশালী উপাদান। থানকুনি পাতা এন্টি অক্সিডেন্ট উৎপাদন করতে সাহায্য করে । এর ফলে শরীরে অক্সিডেন্টের মাত্রা কমে ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ হয়।
- অস্থিরতা ও বিষন্নতা রোধ করতে সাহায্য করে:
একটি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে অনেক এমন ব্যক্তি যারা তুমুল অস্থিরতায় ভোগেন তাদের ক্ষেত্রে থানকুনি পাতা থেকে তৈরী ট্যাবলেট দারুন কার্যকরী হয়েছে। পাতায় ৬০ দিনের মাথায় অত্যন্ত মানসিক চাপ, বিষন্নতা, মনোযোগিতা, ও অস্থিরতার মোট সমস্যা থেকে তারা মুক্তি পেয়েছে । এই পাতায় বিভিন্ন রাসায়নিক ঔষধি যেমন ইমিপ্রামিন ও ডায়াজেপাম ইত্যাদির থেকে কোনো অংশে কম গুণ দেখা যায়না। থানকুনি পাতায় কিছু কিছু এনক্সিয়ালিটিক উপাদানও পাওয়া যায় । এছাড়া থানকুনি পাতা মনোএমাইন নিউরোট্রান্সমিটার যেমন সেরোটোনিন মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে যা সুখ ও মনে খুশির উৎপত্তি করে । এর ফলে বিষন্নতা কমে আসে।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে:
হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ রোধ করতে থানকুনি দারুণ কার্যকরী । এর ফলে রক্ত সঞ্চালন ও রক্তকণিকা উন্নত হয়। তবে হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ হলে থানকুনি পাতা ব্যবহার করার আগে ডাক্তারের সাথে একবার পরামর্শ করে নেবেন।
- পেটের আলসার রোধ করে:
থানকুনি পাতার সাহায্যে গ্যাস্ট্রিক বা আলসারের সমস্যা রোধ করা যায় । এই পাতার এন্টি আলসার উপাদান বিভিন্ন রাসায়নিক ওষুধ যেমন ফ্যামটিডিন ও সোডিয়াম ভ্যালপোরেটের মতোই কার্যকরী। থানকুনি পাতায় রয়েছে গ্যাস্ট্রিক রোধ করার উপাদান যা আলসার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে ।
- কাটা ছেড়া ও জখম দূর করা যায়:
ত্বকে কাটা বা পুড়ে যাওয়ার দাগ কমাতে থানকুনি পাতা বেশ উপকারী। আজকাল নানারকমের ক্রিম থানকুনি পাতার রস থেকে তৈরী হয় যা ত্বকের এসব সমস্যা রোধ করে । এই পাতায় রয়েছে এসিয়াটোকসাইড যা কোলাজেন বাড়িয়ে তুলে ঘা বা কাটা ছেড়া ও জখম সারিয়ে দেয় l
- লিভারকে সুস্থ রাখে:
লিভারকে নষ্ট হওয়া থেকে রোধ করে থানকুনি পাতা। এর সাহায্যে এন্টি অক্সিডেন্ট উৎপন্ন হয় যা ইনফ্লেমেশন কমিয়ে আনে । কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে বলা হয় যে অতিরিক্ত থানকুনি পাতার কারণে লিভারের ক্ষতি হতে পারে l
- ওজন কমাতে সাহায্য করে:
যদিও এই সম্পর্কে খুব কমই তথ্য রয়েছে কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে যে থানকুনি পাতায় থাকা পুষ্টিকর উপাদানগুলি শরীরে ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে যার ফলে আপনার অনায়াসে কম ক্যালোরি যুক্ত খাবার খাওয়ার অভ্যেস হয়ে যায় । তাই ওজন হ্রাস করতে যদি আপনি থানকুনি পাতা ব্যবফর করে থাকেন তাহলে অবশ্যই একবার ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নেবেন।
সূত্রঃ ছবি এবং লেখা সংগ্রহীত।
0 Comments
আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ।